অনেকেই রোজ রোজ নিজের জামা-কাপড় বদলালেও, অন্তর্বাসের দিকে আলাদা করে তেমন কোনো নজর দেন না। অথচ এই ছোট পোশাকটির পরিচ্ছন্নতা ও অবস্থা আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, আরাম এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
অনেকে হয়তো ভাবেন ‘আরে, দেখতে তো ঠিকই আছে, পরছি তো’! কিন্তু অন্তর্বাস শুধু দেখার বিষয় নয়, বরং এটি কতদিন ধরে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আজকে জেনে নিন, পুরোনো অন্তর্বাস কবে ফেলে দেওয়া উচিত, কীভাবে বুঝবেন এটি বদলানোর সময় এসেছে, আর কেন এটি স্বাস্থ্যগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা যা বলেন
ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার গবেষণা বলছে, আমাদের অন্তর্বাসে ধোয়ার পরও ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস থেকে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়।
দ্য হেলদি ও ওয়েল অ্যান্ড গুড-এর মতে, নিয়মিত অন্তর্বাস না বদলালে ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন (ইউটিআই), ইস্ট ইনফেকশন এবং স্কিন র্যাশ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। পুরোনো ও নোংরা অন্তর্বাস এসব সংক্রমণের জন্য একটি স্থায়ী ‘আশ্রয়স্থল’ হয়ে উঠতে পারে।
অন্তর্বাস কতদিন পর পর বদলানো উচিত?
বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন মত থাকলেও গড়ে ধরে নেওয়া হয়, প্যান্টি বা আন্ডারওয়্যার প্রতি ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে বদলে ফেলা ভালো। ভালো মানের ব্রা ৮ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, ফ্যাব্রিক ও ফিটিং ঠিক থাকলে কিছুটা বেশি সময়ও চলতে পারে।
তবে দুটি ক্ষেত্রেই ব্যবহার ও যত্নের ওপর এটি নির্ভর করে। যদি এক জোড়া অন্তর্বাসকে আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন এবং ধোয়ার পর ভালোভাবে না শুকান, তাহলে এর আয়ু অনেকটাই কমে যাবে।
ব্রাইটসাইড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অনেকেই তিন বছর বা তারও বেশি সময় ধরে একই অন্তর্বাস ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন অন্তর্বাস বদলানো দরকার
ফ্যাব্রিক পাতলা হয়ে গেছে বা ছেঁড়া শুরু হয়েছে।
ইলাস্টিক আলগা হয়ে গেছে, ফলে ফিটিং ঠিক নেই।
ধোয়ার পরও গন্ধ বা দাগ যাচ্ছে না।
পরলে অস্বস্তি বা চুলকানি হয়।
ঘন ঘন স্কিন ইনফেকশন বা র্যাশ হয়।
উপরের লক্ষণগুলো শুধু অস্বস্তির কারণ নয়, বরং একেকটি হতে পারে ভেতরে লুকিয়ে থাকা স্বাস্থ্য ঝুঁকির ইঙ্গিত।
আপনার অন্তর্বাস কি ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে?
সঠিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে চাইলে প্রতিবার ব্যবহারের পর অন্তর্বাস ধুয়ে নিতে হবে। তবে কেবল সাবান দিয়ে ধুলেই যথেষ্ট নয়। দ্য হেলদি বলছে, ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি গরম পানিতে ধুলে অনেক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়, কিন্তু অধিকাংশ কাপড় সেই তাপে টিকে না।
এ কারণে সূর্যের আলোতে শুকানো, হালকা গরম পানি ব্যবহার করা এবং মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক তরলে ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অন্তর্বাস ব্যবহারে সচেতনতার ৩টি টিপস
(১) ঘুরিয়ে ব্যবহার করুন: একই অন্তর্বাস রোজ না পরে ৩ থেকে ৫ জোড়া অন্তর্বাস রোটেশনে রাখলে প্রতিটির আয়ু বাড়ে। সেই সঙ্গে পরিষ্কার করার পর ভালোমতো শুকানোর সময় পাওয়া যায়।
(২) লন্ড্রি ব্যাগ ব্যবহার করুন: ওয়াশিং মেশিনে অন্তর্বাস ধোয়ার সময় লন্ড্রি ব্যাগ ব্যবহার করলে কাপড় ও ইলাস্টিকের ক্ষয় কমে।
(৩) হাতে ধোয়া ভালো: তবে নাজুক ফ্যাব্রিকের হলে এগুলো হাতে ধোয়াই ভালো, বিশেষ করে প্যাডেড বা ওয়্যারড ব্রা হলে।
নতুন কেনার সময় যেসব খেয়াল রাখবেন
সুতি বা অন্য এমন কাপড় বেছে নিন, যা দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে।
কাপড় যেন ঘাম শুষে নিতে পারে এবং ঘর্ষণ তৈরি না করে।
সঠিক ফিটিং খুব জরুরি। ফিটিং ভালো না হলে কিছুদিনের মধ্যেই অস্বস্তি তৈরি হবে।
পুরোনো অন্তর্বাস ঠিকঠাক দেখালেও তা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। সঠিক ফিটিং, পরিষ্কার রাখা, ও সময়মতো বাতিল করা – এই ৩ বিষয়ের সমন্বয়েই অন্তর্বাস হতে পারে স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক। তাই স্বাস্থ্যবান থাকতে চাইলে অন্তর্বাসের আয়ু গোনার অভ্যাস করুন।
তথ্যসূত্র: ইয়ামি স্টুডিও, ব্রাইটসাইড, দ্য হেলদি, ওয়েল অ্যান্ড গুড, ফ্যাব্রিক ফিটস