বিদায় ২০২৪। মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। বর্ষ পরিক্রমায় যুক্ত হলো আরেকটি পালক। নতুন এক বর্ষে পদার্পণ করলো বিশ্ব। স্বাগত খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০২৫। পুরনো বছর পেছনে ফেলে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার দুরন্ত আহ্বানে মানুষ স্বাগত জানায় আগত ভবিষ্যৎকে। বিদায়ী বছরের ব্যর্থতাকে সরিয়ে নতুন বছরে নতুনভাবে শুরু হয় পথচলা।
পুরনো বছরের সংশয়, সংকট, উদ্বেগ কাটিয়ে উঠে নতুন ভাবনা নতুন আশায় নতুন করে দিনযাপনের শুরু আজ থেকে। খ্রিস্টীয় নতুন বছরের প্রথম প্রহরে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। নতুন বছর সবার জীবনে শুভ ও কল্যাণ বয়ে আনুক- এটাই কাম্য।
পৃথিবীর দেশে দেশে ভিন্নভাবে আধুনিক আর ঐতিহ্যবাহী উৎসবের মাধ্যমে পুরনো বছর বিদায় আর নতুন বছরটা স্বাগত জানানোর রীতি প্রচলিত আছে। এটা পালিত হয় কোথাও সরকারিভাবে, কোথাও কোনো দল বা গোষ্ঠী।
নতুন বছরের আগমনী গান এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। দেয়ালে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখার জন্য বের করা হয়েছে ক্যালেন্ডার, যেখানে সারা বছরের প্রতিটি দিনের হিসাব আর বারের নাম নিখুঁতভাবে লেখা থাকে।
একটি বছর বারোটি নামের বারোটি মাসে ভাগ করে নতুন বছরটা গুছিয়ে কর্মমুখর করে তুলতে এখন সবাই ব্যস্ত। তবে এ ক্যালেন্ডারের ধারণা প্রথম আসে গ্রহ-নক্ষত্র স্থানান্তরের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে। প্রাচীনকালে মানুষ লক্ষ্য করেছিল সূর্য, চাঁদ, তারা নিজস্ব পথে চলাচল করে। দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করে মানুষ এ গতিপথগুলো বুঝতে শেখে। তারা আরো লক্ষ্য করে, গ্রহ-নক্ষত্রগুলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। কখন, কোন তারাটি কোথায় অবস্থান করলে ফসল বুনতে বা কাটতে হবে, এসব তারা জেনে ফেলে।
বিভিন্ন ঋতুর শুরু বা শেষটাও তারা এভাবেই জেনেছিল। আর ক্রমে এ ধারণা থেকে বর্ষপঞ্জির প্রচলন ঘটে। পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র সূর্য এবং উপগ্রহ চাঁদকে লক্ষ্য করে শুরুতে দু’ধরনের ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন হয়।
প্রায় ছয় হাজার বছর আগে মিসরীয়রা প্রথম লক্ষ্য করেছিল, ৩৬৫ দিনে এক সৌরবছর ধরা যেতে পারে। আমাদের দেশে দু’ধরনের ক্যালেন্ডারের হিসাব প্রচলিত। ইংরেজি বর্ষের হিসাব ধরা হয় যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন থেকে আর বাংলা বছরের ক্যালেন্ডারের প্রচলন করেন মোগল সম্রাট আকবর।
এছাড়া আরবি বর্ষপঞ্জির চলও এ দেশে আছে। আরবি বর্ষপঞ্জি চান্দ্রমাসের হিসাবে গণনা করা হয়। এ হিসাবে ৩৫৪ দিনে এক বছর। হযরত মুহাম্মদ (সা.) যেদিন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, সেদিন থেকেই আরবি বছরের গণনা শুরু হয়। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরির নামানুসারে প্রচলন করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এ বর্ষপঞ্জি এত নিখুঁত যে, প্রতি বছর মাত্র ২৬ সেকেন্ডের পার্থক্য দেখা যায়। হিব্রু ভাষার বর্ষপঞ্জি মনে করা হয় বিশ্বের প্রাচীনতম ক্যালেন্ডার।
বলা হয়, যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৩৭৬০ বছর আগে এর সূচনা হয়েছে। ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার জ্যোতিষী সোসিজিনিসকে দিয়ে যে বর্ষপঞ্জির প্রবর্তন করেন, সেটি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। এটি চালু ছিল প্রায় ১৫০০ বছরের কিছু বেশি সময় ধরে। চীনা বর্ষপঞ্জি অনুসারে, প্রতি বছর চিহ্নিত করা হয় নানা প্রাণীর নামে। নতুন বছর স্বাগত জানাতে নিশ্চয় আজ রাত বারোটা পর্যন্ত জেগে থাকবে। তবে এ রাতে এমন কিছু করো না, যাতে মানুষ বিরক্ত হয়।