জেন জি’র মূল্যায়ন

জেন জি কে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে ‘জেন জি’ কোনো বিচ্ছিন্ন সমাজ নয়। বিশেষ করে এই আন্দোলনের ওরা কারা? ২০১৮ সালে এদের একটা বিশাল অংশ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে ও নেতৃত্ব দিয়েছে। এরা মূলত কলেজে গোয়ারস। এই ছয় বছরে ওরা কি করেছে? ওরা কলেজ উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে অথবা বের হয়েছে মাত্র। এরাই কিন্তু ‘জেন জি’। বৃহত্তর পরিসরে যদি দেখি, কেনিয়াতে যা ঘটছে, নাইজেরিয়াতে যা ঘটছে, মিয়ানমারের রেবেল ফোরস এদের বেশির ভাগই ‘জেন জি’। এদের বয়স ১৮ থেকে ৩০।

কমনালিটিটা কী? পৃথিবীতে যখন কোনো স্থানে বা কোনো জাতি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সেই পরিবর্তনটি সূচনা করে তরুণ যুবসমাজ। ওদের মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথমত, ওরা পরিবর্তনের দূত বা কারিগর। দ্বিতীয়ত, ওরা প্রচলিত প্রথা বা বিদ্যমান পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জ করতে ভয় পায় না। যখন মানুষ, দল বা পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে, তখন তারা প্রায়ই আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু তরুণ সমাজের এই দীর্ঘ সময়ের দাসত্বের শৃঙ্খলটি বা বোঝা নাই। ওরা প্রশ্ন করতে ভয় পায় না। চ্যালেঞ্জ করতে ভয় পায় না। ওরা স্বপ্ন দেখার সাহস করে। তৃতীয়ত, ওরা কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্বাসী। এত কথা আর বাহাসের মধ্যে নাই। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী। 

এটার শক্তি কী? এটার শক্তিটা হচ্ছে, তাদের সাহস, কার্যকরী পদক্ষেপ এবং স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা সবকিছু মিলিয়ে তারা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই পরিবর্তন আনতে পারে, যা প্রজন্ম ধরে অনুভূত হয় এমন সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ওরা তো বিচ্ছিন্ন নয়, মানব সভ্যতা যদি একটা মুভিং ট্র্যাক হয়, এই জেন জি ১৮ থেকে ৩০ এটা একটা মুভিং ট্রেইন এর মতো। যারা ১৯৭১ এ যুদ্ধ করেছে তাদের অধিকাংশের বয়স ছিল বিশের কোঠায়। তারা এখন সত্তুরে পৌঁছেছে। তখন একটা পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধ করেছে। পরবর্তীতে এরা কোনো না কোনোভাবে পচে যাওয়া ঘুনে ধরা ব্যবস্থার অংশ হয়েছে। যার বিরুদ্ধে এই জেন জি রা বিদ্রোহ করছে। এখন যে মেয়েটা বা ছেলেটা আন্দোলন করছে ভবিষ্যতে কয়েক দশকের মধ্যে এরাই হেড অব দ্য স্টেট হবে। এই বিবর্তন চক্র চলমান।

মানেটা হচ্ছে ১৯৭১ এ যারা যুদ্ধ করেছে তাদের মধ্যে এই দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই পরিবর্তন আনতে পারে, যা প্রজন্ম ধরে অনুভূত হয় এমন সম্ভাবনা ছিল।

জেন জি একটা পজিটিভ চেঞ্জ আনতে পারবে কি আনতে পারবে না, তারা ন্যায়ভিত্তিক, সুষ্ঠু এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে পারবে কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। তবে, তাদের সফল হওয়ার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি আমরা তৈরি করতে পারি। যেমন আমাদের স্বাধীনতার প্রথম দশকে যেটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে আমরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছি। এটাতে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে; কিন্তু জাতিগতভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা যদি একই ধারা অব্যাহত রাখি, সেটি ‘জেন জি’ এর সফলতা লাভের ক্ষেত্রে একটি ক্রিটিক্যাল ফ্যাক্টর হবে। মনে রাখতে হবে জেন জি আইসোলেটেড একটা শক্তি না। এর মধ্যে ছাত্রলীগ, ছাত্র দল, শিবির, অন্যান্য ছাত্র শক্তির একই বয়সীরা অন্তর্ভুক্ত। 

এই জেনারেশন যেটা শুরু করেছে কারণ তারা পরিবর্তনের দূত, তারা স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে, ওরা প্রশ্ন করার সাহস করেছে এবং মাঠ পর্যায়ে অ্যাকশন নিয়েছে, আমাদের একটা সুযোগ বা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে যে এখন পজিটিভ দিকে যাওয়ার। এটাকে পজিটিভলি মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু এটা যেন ওরা টেকসই করতে পারে, পূর্বসূরিদের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করে, এই জন্য আমাদের ওদের জন্য শক্ত ভিত তৈরি করতে হবে। দেখতে হবে আমরা কতটুকু করতে পেরেছি। যারা এতদিন অন্যায় করেছে, দুর্নীতি করেছে, অবিচার করেছে তাদের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে কি না? জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পেরেছি কি না; আমরা যদি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে ওরা যেটা শুরু করেছে সেটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights