ওয়ানডেতে পাক-ভারত দ্বৈরথ

ওয়ানডেতে পাক-ভারত দ্বৈরথ

মিঁয়াদাদের ক্ষ্যাপাটে লাফ থেকে টেন্ডুলকারের দাপট, ৬ ঐতিহাসিক লড়াই

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চলমান নবম আসরের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচে আজ (রোববার) মুখোমুখি হবে ভারত-পাকিস্তান। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের এই লড়াই যুগ যুগ ধরে ক্রিকেটবিশ্বকে একটি সুতোয় বেঁধে আসছে। যার রেশ ধরে উত্তেজনা-উন্মাদনায় মাতেন ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট জাতি, বিশ্লেষক এবং ক্রিকেটমোদী ভক্তরাও। দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর ৩টায়।

ঐতিহাসিকভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ ভারত-পাকিস্তানের এই ২২ গজের লড়াই। যে লড়াইয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য সুখস্মৃতি কিংবা কখনও লেগেছে বিতর্কের আঁচ–ও। পাক-ভারতের এই রোমাঞ্চকর দ্বৈরথের ৬টি ঐতিহাসিক মুহূর্ত বাছাই করেছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা এএফপি।

মিঁয়াদাদের ছক্কা ও ক্ষ্যাপাটে উদযাপন (১৯৮৬, ১৯৯২)
ভারত-পাকিস্তানের স্মরণীয় ম্যাচের আর্কাইভ ঘাটলে নিঃসন্দেহে একটি ম্যাচ সামনের সারিতে থাকবে। ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় অস্ট্রেল-এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা। যেখানে শেষ বলে ছয় হাঁকিয়ে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন কিংবদন্তি ব্যাটার জাভেদ মিঁয়াদাদ।

কেবল শেষ বলে ছয়–ই নয়, তিনি ম্যাচটিতে সেঞ্চুরি করেছিলেন, খেলেছেন ১১৬ রানের কার্যকরী ইনিংস। আগে ব্যাট করা ভারত সুনীল গাভাস্কারের ৯২ রান এবং আরও দুজনের ফিফটিতে সংগ্রহ করেছিল ২৪৫ রান। লক্ষ্য তাড়ায় মিঁয়াদাদ নামেন ৬১/৩ স্কোরবোর্ড থাকাবস্থায়, এরপর মাঠ ছাড়েন জয় নিশ্চিত করে। শেষ বলে ৪ রান দরকার ছিল, চেতন শর্মার ফুলটস ডেলিভারিতে পাকিস্তানি তারকা সেটি পূর্ণ করেন ছয় হাঁকিয়ে।

এ ছাড়া ১৯৯২ বিশ্বকাপে মিঁয়াদাদের ক্যাঙ্গারু লাফ বা নাচের দৃশ্য তো আইকনিক দৃশ্যগুলোর একটি। ভারতের রানতাড়ায় উইকেটের পেছন থেকে কিপার কিরন মোর ক্রমাগত ক্ষেপিয়ে তুলছিলেন মিঁয়াদাদকে। পরবর্তীতে সফলভাবে একটি সিঙ্গেল রান নিয়ে সেই অদ্ভুতুড়ে লাফটি দেন পাক ব্যাটার। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান।

ইমরান খানের দংশন (১৯৮৫)

ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ‘রথম্যান চারজাতি টুর্নামেন্টের’ সেই ফাইনাল ম্যাচটিও ছিল শারজায়। দুর্দান্ত পেস আগুনে তিনি ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দিয়েছেন। ৬ উইকেট শিকার করেছেন মাত্র ১৪ রান খরচায়। ফলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে মাত্র ১২৫ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন সর্বোচ্চ ৪৭ এবং অধিনায়ক কপিল দেব করেন ৩০ রান।

তবে সেই রানও পার করতে পারেনি পাকিস্তান। কপিল–রবী শাস্ত্রীদের বোলিং তোপে তারা মাত্র ৮৭ রানেই অলআউট হয়ে যায়। ৩৮ রানে পরাজিত পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ২৯ রান আসে রমিজ রাজার ব্যাটে।

অজয় জাদেজার তাণ্ডব (১৯৮৬)
ভারতের বেঙ্গালুরুতে স্বাগতিকরা ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তানের। যেখানে আগে ব্যাট করতে নেমে ভারতের রান ছিল ধীরগতির। ৪২ ওভার পর্যন্ত তাদের স্কোরবোর্ডে ছিল মাত্র ২০০ রান। এরপরই ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন অজয় জাদেজা। ২৫ বলে ৪৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে তিনি ভারতের পুঁজি ২৮৭ রানে নিয়ে যান। জবাবে পাকিস্তানের আমির সোহেল ও সাইদ আনোয়ারের উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরু পেলেও দলীয় রান থামে ২৪৮–এ। ৩৯ রানের জয়ে ভারত সেমিফাইনালে ওঠে।

শহীদ আফ্রিদির শেষ ওভারের বীরত্ব (২০১৪)
ঢাকার মিরপুর শের-ই বাংলায় অনুষ্ঠিত ২০১৪ এশিয়া কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ২৪৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ভারত। লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তানও জয়ের পথেই ছিল। কিন্তু একপর্যায়ে ২০০/৪ থেকে তাদের স্কোরবোর্ড পরিণত হয় ২৩৬/৯–এ। শেষ ৪ বলে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ৯ রান। ভারতের দিকেই ছিল ম্যাচের পেন্ডুলাম। তবে ক্রিজে তখনও দাঁড়িয়ে শহীদ আফ্রিদি। বুমবুম আফ্রিদিও পরপর দুটি ছয় হাঁকিয়ে নায়ক বনে যান, আর পাকিস্তান জিতে নেয় এশিয়া কাপের শিরোপা।

টেন্ডুলকারের রাজত্ব (২০০৩)
শচীন টেন্ডুলকার ভারতের হয়ে অসংখ্য ম্যাচ জিতেছেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার ৯৮ রানের ইনিংস খেলা ম্যাচটি অন্যতম স্পেশাল হয়ে থাকবে। ওপেনার সাইদ আনোয়ারের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে ২৭৩ রান সংগ্রহ করে প্রথম ইনিংসে। তবে পাকিস্তানি বোলারদের স্বস্তি কেড়ে নেন টেন্ডুলকার। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস ও শোয়েব আখতারদের নিয়ে গড়া শক্তিশালী বোলিং লাইনআপকে তুড়ি মেরে খেলেন ৭৫ বলে ৯৮ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস। তার এমন রাজসিক ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেটের সহজ জয় পায় ভারত।

শোয়েবের একটি ডেলিভারিকে আপার কাটে ছক্কায় পরিণত করা টেন্ডুলকারের সেই শটটি অন্যতম আইকনিক ছবি। যদি পাক এই পেসারের বাউন্সে ম্যাচে এদিন উইকেট খোয়ান শচীন। তবে এর আগেই তিনি কাজ সেরে নেওয়ায় ভারতের জয় পেতে কোনো অসুবিধাই হয়নি।

ফখর জামান’স স্পেশাল (২০১৭)
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান ফাইনাল খেলতে নেমেছিল আন্ডারডগ তকমা নিয়ে। তবে ১০৬ বলে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজানো ১১৪ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের বড় জয়ের ভিত গড়ে দেন ফখর জামান। ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের বড় সংগ্রহ নিয়ে দলটি ইনিংস শেষ করে। জবাবে মাত্র ১৫৮ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। বিফলে যায় হার্দিক পান্ডিয়ার ৭৬ রানের ইনিংস। বিপরীতে মোহাম্মদ আমির ও হাসান আলি ৩টি করে উইকেট শিকার করে পাকিস্তানের শিরোপা নিশ্চিত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights